Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশে ঔষধি গুণসম্পন্ন ঋষি মাশরুম চাষের সম্ভাবনা

বাংলাদেশে ঔষধি গুণসম্পন্ন ঋষি মাশরুম চাষের সম্ভাবনা
ড. মোছা: আখতার জাহান কাঁকন
ঋষি মাশরুম  বিশ্বে ঔষধি মাশরুম হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে চীন, জাপান ও মালয়েশিয়াতে হারবাল মেডিসিন হিসেবে এই মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঋষি মাশরুম দিয়ে ক্যান্সার, টিউমার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। এ ছাড়া কসমেটিকস শিল্পে পেস্ট, সাবান, লোশন, শ্যাম্পু, ম্যাসেজ ওয়েল, এমনকি চা, কফি, চকলেট তৈরিতেও ইহার ব্যবহার বিশ্বে প্রচুর। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হওয়ায় এ মাশরুম বাংলাদেশে খুব সহজেই চাষ করা যায়। বর্তমানে অত্র সেন্টারে এই মাশরুমের ৯টি স্ট্রেইন রয়েছে যাহা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় গ্রীষ্মকালে (মার্চ-অক্টোবর) চাষ উপযোগী। ইহার সংরক্ষণ ক্ষমতা ও বাজারমূল্য অনেক বেশি হওয়ায় বর্তমানে এই মাশরুম আমাদের দেশে বাণিজ্যিক আকারে চাষ করা সময়ের দাবি। 
বৈশিষ্ট্য : ঔষধি গুণসম্পন্ন। সবজি হিসেবে এই মাশরুম খাওয়া যায় না। ফ্রুটিং বডি কাষ্টল প্রকৃতির। বাজারমূল্য অত্যন্ত বেশি। গ্রীষ্মকালীন মাশরুম।
ঋষি মাশরুমের মরফোলজি 
মাইসেলিয়াম প্রথমে সাদা বর্ণ ধারণ করে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে হাল্কা হলুদ বর্ণে পরিণত হয়। প্রাইমরডিয়া সাদা-বাদামি বর্ণের কিছুটা শক্ত। প্রাইমরডিয়া যখন লম্বা হয়ে হরিণের শিংয়ের মতো ধারণ করে তখন তাকে এন্টলার (অহঃষবৎ) বলে। এন্টলারের বর্ণ কালচে লাল হয়ে থাকে। ইহা ১.০০-৮.০০ সেমি. পর্যন্ত লম্বা ও ১.০০-৩.০০ সে.মি. ব্যাসবিশিষ্ট। তরুণ পিলিয়াসকে কন্ক  বলে। এন্টলারের অগ্রভাগে হাতের তালুর মতো কন্ক ছড়াতে দেখা যায়। ইহার বর্ণ লাল এবং এর কিনারা সাদা-হলুদাভ হয়ে থাকে। ইহা ৫.০০-৮.০০ সেমি. ব্যাসের হয়ে থাকে। এন্টলার ও কন্ক পরিপক্ব হয়ে কাষ্টল প্রকৃতির ফ্রুটিং বডি ধারণ করে। এন্টলার উহার স্টাইপ  এবং কন্ক উহার পিলিয়াস  হয়ে থাকে। স্টাইপ পিলিয়াসের কিনারা বরাবর যুক্ত থাকে। পরিপক্ব ফ্রুটিং বডি অর্ধবৃত্তাকার ও কিডনির মতো। এর উপরের স্তর গাঢ় লাল, চকচকে উজ্জ্বল এবং নিচের অংশ হাল্কা বাদামি ও অসংখ্য লালচে স্পোর  ধারণ করে। 
ঋষি মাশরুম চাষের অনুকূল পরিবেশগত অবস্থা 
ঋষি মাশরুমের চাষ প্রণালী প্রযুক্তি 
ঋষি মাশরুম চাষ করার জন্য নিম্নোক্ত ধাপগুলো বিবেচনা করা হয়।
জাত বা স্ট্রেইন নির্বাচন : মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ঋষি মাশরুমের ৯টি স্ট্রেইন  আছে। স্ট্রেইনগুলো যথা : এষ-১, এষ-২, এষ-৩, এষ-৪, এষ-৫, এষ-৬, এষ-৭ এষ-৮ এষ-৯. সবগুলি স্ট্রেইন আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় খুবই উপযোগী এবং চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। 
চাষ প্রযুক্তি নির্বাচন : বিশ্বে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঋষি মাশরুমের চাষ করা হয়। যেমন : ব্যাগ কাল্টিভেশন, লগ কাল্টিভেশন, বোতল/পট কাল্টিভেশন, ট্যাংক কাল্টিভেশন, জিন সাউ প্রযুক্তি  প্রভৃতি। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রযুক্তি মতে বাংলাদেশে কাঠের গুঁড়া দিয়ে ব্যাগ কাল্টিভেশনের মাধ্যমে  ঋষি মাশরুম চাষ করা হয়। 
মাশরুমের বীজ উৎপাদন : পিওর কালচার থেকে মাদার কালচার প্রস্তুত পর্যন্ত প্রণালী ওয়েস্টার মাশরুমের অনুরূপ। তবে বড় সাইজের স্পন প্যাকেট ইনোকুলেশনের জন্য পাটকাঠি/বাঁশের কাঠিতে তৈরি মাদার কালচার ব্যবহার করলে মাইসেলিয়াম পরিপূর্ণ হতে সময় কম লাগে।
ঋর্ষি মাশরুমের বাণিজ্যিক স্পন তৈরির জন্য সাবস্ট্রেট ও  সাপ্লি­মেন্ট নির্বাচন 
ঋষি মাশরুমের স্পন সাবস্ট্রেট হিসেবে মিক্সড কাঠের গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া উহার সহিত সাপ্লি­মেন্ট হিসেবে গমের ভূষি, চালের কুড়া, ভুট্টার পাউডার প্রভূতি ব্যবহার করা যায়। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউিট কর্তৃক প্রযুক্তি মতে কাঠের গুড়া ও গমের ভূসি দিয়ে অত্যন্ত সহজে স্পন তৈরি করা যায় এবং ফলনও অনেক বেশি হয়। 
সাবস্ট্রেট ফরমুলেশন ও স্পন তৈরি : উল্লেখিত উপাদানগুলি (ফরমুলেশন-১ অথবা ফরমুলেশন-২) নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পিপি ব্যাগে ৫০০ অথবা ১০০০ গ্রাম করে ভরে প্ল­াস্টিক নেক দ্বারা বেঁধে কাঠের লাঠি দ্বারা প্যাকেটের মুখে গর্ত করে দিতে হবে। অতঃপর কটন স্টপার দিয়ে মুখ বন্ধ করে ব্রাউন পেপার দিয়ে ঢেকে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেধে দিতে হবে। তারপর অটোক্লেভ মেশিনে ১২০০ সে. তাপমাত্রায় ১.৫ কেজি/সে.মি.২ প্রেসারে ২.০ ঘন্টা রেখে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। অতঃপর প্যাকেট ঠান্ডা হলে ল্যাবরেটরিতে ক্লীনবেঞ্চে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় মাদার কালচার দিয়ে উক্ত প্যাকেটে ইনোকুলেশন করতে হবে। ইনোকুলেশনকৃত প্যাকেটকে গ্রোথ চেম্বারে ইনকিউবেশন পিরিয়ডের জন্য রেখে দিতে হবে। এভাবে ২৫-৩০ দিন রাখার পর মাইসেলিয়াম দ্বারা প্যাকেট পূর্ণ হবে যা পরবর্তীতে চাষ ঘরে ব্যবহৃত হবে। তবে ফরমুলেশন-২ এর ক্ষেত্রে সময় কিছুটা কম লাগে।
প্যাকেট কর্তন : ঋষি মাশরুমের স্পন প্যাকেট বিভিন্ন ভাবে কর্তন করা যেতে পারে। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রযুক্তি মতে সাইড ওপেনিং ও টপ ওপেনিং এই দুই পদ্ধতিতেই চাষ করা হয়। সাইড ওপেনিং এর ক্ষেত্রে চাষ ঘরে প্যাকেট বসানোর পূর্বে মাইসেলিয়াম পূর্ণ স্পন প্যাকেট হতে নেক, তুলা, ব্রাউন পেপার ইত্যাদি খুলে প্যাকেটের মুখ রাবার ব্যান্ড দিয়ে শক্ত করে বেধে দিতে হবে। অতঃপর কোনাযুক্ত প্যাকেটের এক পাশে মাঝ বরাবর ০.৫-১.০ সেমি. করে বর্গাকারে পিপি কেটে ব্লে­ড দিয়ে সাদা অংশ চেঁছে ফেলতে হবে। এরপর র‌্যাকে সারি সারি করে বসিয়ে দিতে হবে। তবে বোতলে চাষ অথবা প্যাকেট মাটিতে পুতে দেয়ার ক্ষেত্রে টপ ওপেনিং করাটাই ভাল। এক্ষেত্রে বোতলে অথবা প্যাকেটের উপরের দিক দিয়ে ওপেনিং করে চাষ ঘরে বসিয়ে পরিচর্যা করতে হয়।
পরিচর্যা : চাষ ঘরে র‌্যাকে মাশরুমের স্পন সাজিয়ে পরিচর্যা করলে মাশরুমের ফলন ভাল পাওয়া যায়। এ অবস্থায় চাষের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য দিনে ৩-৫ বার পানি ¯েপ্র করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো কোন অবস্থায় আর্দ্রতার পরিমাণ কমে না যায়। এভাবে পরিচর্যা করলে ৩-৭ দিনের মধ্যেই সাদা শক্ত পিনহেড দেখা যাবে। ইহা ৫-১০ দিনের মধ্যে আঙুলের মত লম্বা হয়ে লালচে বর্ণের হবে যাকে এন্টলার বলা হয়। এই এন্টলার পর্যায়টি ১০-১৫ দিনের মধ্যে উহার অগ্রভাগ হাতের তালুর মত চ্যাপ্টা ধারণ করবে যাকে কন্ক বলে। ইহার কিনারা সাদা-হলদে ভাব হয়ে থাকে। এই অবস্থায় চাষ ঘরের আলো ও বায়ু চলাচলের অবস্থা বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে কন্ক দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে লালচে কিডনি আকার ধারণ করবে, কনক্রে এই পরিপক্বতাই মাশরুমের ফ্রুটিংবডি। খেয়াল রাখতে হবে যেনো চাষ ঘরে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করার জন্য ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়া চাষ ঘর সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখতে হবে।
বোতলে চাষ পদ্ধতি : বোতলে চাষের ক্ষেত্রে উপরোক্ত উপাদানগুলি (ফরমুলেশন-১ অথবা ফরমুলেশন-২) ভাল করে মিশিয়ে ৫০০ গ্রাম করে প্ল­াস্টিক বোতলে ভরে কাঠের লাঠি দ্বারা ছিদ্র করে কটন স্টপার দিয়ে মুখ বন্ধ করে ব্রাউন পেপার দিয়ে ঢেকে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেধে দিতে হবে। তারপর অটোক্লেভ মেশিনে ১২০০ সে. তাপমাত্রায় ১.৫ কেজি/সি.মি.২ প্রেসারে ২.০ ঘন্টা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। অতঃপর বোতল ঠান্ডা হলে ল্যাবরেটরিতে ক্লীনবেঞ্চে জীবানুমুক্ত অবস্থায় মাদার কালচার দিয়ে ইনোকুলেশন করতে হবে। ইনোকুলেশনকৃত বোতলকে গ্রোথ চেম্বারে ইনকিউবেশন পিরিয়ডের জন্য রেখে দিতে হবে। এভাবে ৩৫-৪০ দিন রাখার পর মাইসেলিয়াম দ্বারা পূর্ণ হবে এবং বোতলের মুখ খুলে দিয়ে চাষ ঘরে রেখে ঠিকমত পরিচর্যা করলে ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ভাল ফলন পাওয়া যায়। 
সংগ্রহ ও ফলন : প্যাকেট চাষ ঘরে বসানোর ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। পরিপক্ব ফ্রুটিং বডি সংগ্রহের উপযোগী লক্ষণ হলো উহার কিনারার বৃদ্ধি থেমে গিয়ে সাদা-হলুদাভ থেকে সম্পূর্ণ লাল বর্ণ ধারণ করে এবং অসংখ্য লালচে স্পোর পরতে দেখা যায়। পরিপক্ব ফ্রুটিং বডি তুলে নেওয়ার পরে প্যাকেটের কাটা স্থান হতে দ্বিতীয় বার ফলন পাওয়া যায়। নিয়মিত পরিচর্যা করলে প্রতি প্যাকেট হতে ২-৩ বার ফলন পাওয়া সম্ভব। একটি ৫০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট হতে গড়ে ৫০-৬০ গ্রাম এবং ১০০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট হতে গড়ে ৭০-৯০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়।
সংরক্ষণ : ঋষি মাশরুম সংগ্রহ করে রোদে বা ড্রায়ারে  শুকাতে হবে। এরপর পিপি ব্যাগে ভরে সিলিং করে অনেক দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। শুকনা ঋষি মাশরুম বায়ুরোধী অবস্থায় ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া পাউডার করেও অনেক দিন রাখা যায়। ১ কেজি শুকনা ঋষি মাশরুম পেতে জাতভেদে ৩.০-৩.৫কেজি তাজা মাশরুম লাগে।

লেখক : মুখ্য প্রশিক্ষক, এটিআই সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ। সংযুক্ত: ফোকাল পারসন, মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্রহ্রাসকরণ প্রকল্প, মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, সাভার, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৮১৩৭১১৩, ই-মেইল : শধশড়হ.ংসফঢ়@মসধরষ.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon